You are currently viewing রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর খাবার

পবিত্র রমজান মাসে প্রতিটি মুসলমান নারী-পুরুষের জন্য রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে অনেক অসুস্থ ব্যক্তি রোজা রাখতে পারেন না। এর মধ্যে ডায়াবেটিস রোগীরা অন্যতম। এ রোগে এমনিতেই বিভিন্ন খাবারের বিষয়ে বিধিনিষেধ আছে। তাই রমজানে কী খাবেন আর কী খাবেন না, তা নিয়ে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। এ রোগের সঙ্গে যদি আরও কোনো জটিলতা থাকে তাহলে শারীরিক অবস্থা বুঝে পুষ্টিবিদের পরামর্শে খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করা জরুরি।

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েট চার্ট কেমন হবে

প্রথমত, ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখতে হলে তার তিন মাসে আগে থেকে সুগার কন্ট্রোল থাকা উচিত। নইলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর যাঁদের সুগার কন্ট্রোল থাকে তাঁরা নিয়ম মেনে রোজা রাখতে পারবেন। সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের দিনে ছয় বেলা খাবার গ্রহণ করতে বলা থাকলেও রমজানে খাওয়ার সময় পাওয়া যাবে তিন বেলা। তাই এখানে একটি বেলার খাবার বেশি খাবেন আর একটি বেলার খাবার খাবেন না রমজানে তা ভুলেও করা যাবে না। এতে সুগার লেবেল ইমব্যালেন্স হয়ে যেতে পারে। এ জন্য প্রতি বেলার খাবার সময়মতো অল্প অল্প করে খেতে হবে।

সাধারণত সারা দিন রোজা রাখার পর শরীরে পানিশূন্যতা থাকে বেশি। এ জন্য একেবারে বেশি পরিমাণে পানি পান করা যাবে না, বিশেষ করে শরবতজাতীয় ঘন পানীয়। এটি শরীরে শোষিত হতে বেশি সময় লাগে যা হজমে বিঘ্ন ঘটায়। এ জন্য পাতলা করে শরবত খেতে হবে। এ ছাড়া ইফতারে পানিশূন্যতা এড়াতে ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন ডাবের পানি, ইসবগুলের ভুসির শরবত, তোকমা, টক দইয়ের লাচ্ছি, চিনি ছাড়া লেবুর শরবত, কাঁচা আমের জুস ইত্যাদি। যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তারা প্রথমে টকজাতীয় শরবত না খেয়ে সবজির স্যুপ বা সবজির জুস করে খেতে পারেন।

এ ছাড়া ইফতারের খাবার হতে হবে সকালের নাশতার সমান, যা সারা দিনের মোট খাবারের ৩ ভাগের ১ ভাগ। এ জন্য কয়েকটি স্বাস্থ্যকর খাবার হলো কাঁচা ছোলা সেদ্ধ সঙ্গে আদা, টমেটো, পুদিনা ও অল্প লবণ মিশিয়ে মুড়ি মাখানো। আরও খেতে পারেন দই-চিড়া, দই–বড়া, নরম খিচুড়ি, লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, শসার রায়তা, ডিম সেদ্ধ, সাবুদানা মেশানো স্যুপ, মিক্সড ফল বা ফলের সালাদ যেকোনো একটি। তবে অবশ্যই ডালের তৈরি খাবার একের অধিক খাবেন না। যেমন ডালের বড়া, ঘুগনি, খিচুড়ি, হালিম, চটপটি এগুলোর যেকোনো একটি খাবার খেতে হবে।

আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার

রাতের খাবার

ইফতারের পরেই রাতের সময়কাল খুব অল্প। অনেকে ইফতারে বেশি খাবার খেয়ে রাতের খাবার বাদ দেন। এটি একেবারে ঠিক নয়। রাতের খাবারে হালকা কিছু খেতে পারেন। হালকা মসলায় রান্না করা ছোট মাছ, মুরগি, মাংস, সবজি, ডাল, শিমের বিচি, সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। এ ছাড়া লাল আটার রুটি, চিড়া, মুড়ি, খই, ওটস, যেকোনো একটি পরিমাণমতো খেতে পারেন। অবশ্যই ভুনা করা খাবার থেকে বিরত থাকবেন।

 

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার_তালিকা - Fit Bay

সেহরির খাবার

সাহ্‌রির খাবারটি খাওয়া হয় রাতের শেষ প্রহরের দিকে। এ জন্য অনেকে পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার সময় পান না। এ জন্য প্রোটিনযুক্ত খাবারের মধ্যে মাছ, মুরগি, ডিম বেছে নিতে পারেন। গরুর মাংস, ডাল না খাওয়াই ভালো। কারণ, এগুলো পানির চাহিদা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া যাদের আগে থেকে হজমজনিত সমস্যা আছে তারা ডাল, মাংস এ সময় এড়িয়ে চলবেন। আবার এ সময় দুধ খেলে ডাল খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা

ব্লাড প্রেশার ও সুগার চেক করুন

আপনি যদি সুগারের রোগী হন, তবে সময়মতো আপনার ব্লাড প্রেশার চেক করুন। ১৪-১৫ ঘণ্টা রোজার প্রভাব ব্লাড লেভেলের ওপর পড়ে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তচাপ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

সময়মতো সুগার চেক করাও জরুরি। সুগার লেভেল বৃদ্ধি বা হ্রাস-এর পরিস্থিতি অনুযায়ী আপনার ডায়েটে এমন খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখবে।

ওষুধ ও ইনসুলিন

রোজা শুরুর আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধের মাত্রা ও সময়সূচী সমন্বয় করে নিতে হবে। যারা ওষুধ খান তারা সকালের ডোজ ইফতারের শুরুতে এবং রাতের ডোজটি অর্ধেক পরিমাণে সেহরির আধা ঘণ্টা আগে খাবেন। যারা ইনসুলিন নেন, তারা সকালের ইনসুলিন ডোজটি ইফতারের আগে আর রাতের ডোজটি কিছুটা কমিয়ে সেহরির আধা ঘণ্টা আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করবেন।

হাঁটা ও ব্যায়াম

রোজা রেখে দিনের বেলা অতিরিক্ত হাঁটা বা যেকোনো ভারী কায়িক পরিশ্রম না করাই ভালো। ৫ ওয়াক্ত নামাজ ও সময় নিয়ে তারাবীহ নামাজ আদায় করা রমজানে শারীরিক ব্যায়ামের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

মনে রাখা জরুরি

১। রোজা রেখে কখনোই আগের মাত্রায় ওষুধ বা ইনসুলিন নেবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ওষুধ বা ইনসুলিন সমন্বয় করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

২। রোজায় ক্যালরি ঠিক রেখে শুধু খাদ্য উপাদান ও খাওয়ার সময় পরিবর্তিত হবে।

৩। সেহরিতে কোনো অবস্থায়ই না খেয়ে বা সামান্য কিছু খেয়ে রোজা রাখা যাবে না।

৪। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা, বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টা, ইফতারের ঠিক আগে এবং ইফতারের ঠিক ২ ঘণ্টা পরে গ্লুকোমিটারে রক্তের গ্লুকোজ লেভেলের চার্ট বানিয়ে ফেলতে হবে। কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে বা রক্তের গ্লুকোজ লেভেলে অসামঞ্জস্য দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রক্তের গ্লুকোজ লেভেল কমে ৩.৯ মিলিমোল/লিটারের নিচে এসে রোগী হাইপো হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে কখনোই মুখে চিনির পানি বা অন্য কিছু খাওয়াতে যাবেন না। এক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

Leave a Reply