You are currently viewing শারীরিক ফিটনেস কাকে বলে? কেনো এটি প্রয়োজন এবং কিছু ভ্রান্ত ধারণা

শারীরিক ফিটনেস কাকে বলে? কেনো এটি প্রয়োজন এবং কিছু ভ্রান্ত ধারণা

শারীরিক ফিটনেস মানে হলো আপনার শরীরের কর্মক্ষমতা। এর অর্থ শুধু রোগা হওয়া বা পেশিবহুল শরীর তৈরি করা নয়। বরং এর মানে হলো, আপনি কত সহজে দৈনন্দিন কাজগুলো করতে পারেন, কত দ্রুত হাঁপিয়ে যান এবং আপনার শরীরে কতটা শক্তি থাকে। একজন শারীরিক ভাবে ফিট ব্যক্তি সহজেই দৌড়াতে, লাফাতে, ভারী জিনিস তুলতে এবং দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে পারে। শারীরিক ফিটনেস আপনার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যেমন – হৃদপিণ্ড, ফুসফুস এবং পেশীগুলোকে সুস্থ রাখে। এই পোস্টে শারীরিক ফিটনেস কাকে বলে তা নিয়ে জানতে পারবেন।

শারীরিক ফিটনেসের উপকারিতা অনেক। এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফলে বিভিন্ন রোগ যেমন – হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও অতিরিক্ত ওজন হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যকলাপ আপনার মনকে সতেজ রাখে, মানসিক চাপ কমায় এবং ঘুমের উন্নতি ঘটায়। খেলাধুলা ও ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি আরও প্রাণবন্ত ও উদ্যমী হয়ে ওঠেন, যা আপনার দৈনন্দিন জীবন এবং কাজের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিশুদের শারীরিক ফিটনেস তাদের সঠিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অপরিহার্য। তেমনি নারীদের ফিটনেস তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং কর্মক্ষমতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শারীরিক ফিটনেস অর্জনের জন্য কিছু সহজ টিপস অনুসরণ করা যায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য দ্রুত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করা উচিত। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করাও জরুরি। খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করা বা নাচের মতো কার্যকলাপও শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। একটি দৈনিক ফিটনেস রুটিন তৈরি করে সেটা মেনে চললে শরীরকে সুস্থ রাখা সহজ হয়। মনে রাখবেন, অল্প অল্প করে শুরু করাই যথেষ্ট, কিন্তু নিয়মিত ব্যায়াম করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সকালে খালি পেটে কি খেলে সহজে অনেক কম সময়ে মোটা হওয়া যায় জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

শারীরিক ফিটনেস সংজ্ঞা ও গুরুত্ব

শারীরিক ফিটনেস কাকে বলে: সংজ্ঞা ও গুরুত্ব

শারীরিক ফিটনেস কী? (ডেফিনিশন, অর্থ, সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা)

শারীরিক ফিটনেস বলতে বোঝায় আপনার শরীরের সেই সক্ষমতা, যা আপনাকে দৈনন্দিন কাজকর্ম সহজে ও দক্ষতার সাথে করতে সাহায্য করে। এর মানে শুধু রোগমুক্ত থাকা বা শক্তিশালী পেশী তৈরি করা নয়। বরং, এটি আপনার হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, পেশী এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের এমন একটি অবস্থা, যেখানে তারা পর্যাপ্ত শক্তি ও সহনশীলতা নিয়ে কাজ করতে পারে। একজন ফিট ব্যক্তি ক্লান্তি ছাড়াই দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে পারে, দ্রুত দৌড়াতে পারে এবং বিভিন্ন শারীরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, শারীরিক ফিটনেস হলো আপনার শরীরের কর্মক্ষমতা। এটি নির্দেশ করে যে আপনি কতটা সহজে হাঁটা, দৌড়ানো, ভারী জিনিস তোলা বা অন্য কোনো শারীরিক কাজ করতে পারেন। আপনার শরীরে যদি যথেষ্ট শক্তি থাকে এবং আপনি সহজে হাঁপিয়ে না যান, তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনার শারীরিক ফিটনেস ভালো। শারীরিক ফিটনেস ভালো থাকলে আপনি শুধু দৈনন্দিন কাজগুলোই ভালোভাবে করতে পারবেন না, বরং বিভিন্ন রোগ থেকেও নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।

কেন শারীরিক ফিটনেস প্রয়োজন?

শারীরিক ফিটনেস আমাদের সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন যাপনে অপরিহার্য। এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিছু ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যকলাপ আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হাড় ও পেশী শক্তিশালী করে তোলে। এর ফলে বার্ধক্যেও শরীর সচল থাকে এবং আঘাতের ঝুঁকি কমে।

শারীরিক ফিটনেস শুধু আমাদের শরীরকেই সুস্থ রাখে না, এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ব্যায়ামের ফলে আমাদের মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মনকে প্রফুল্ল রাখে এবং মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। এটি আমাদের ঘুমকে উন্নত করে, যা আমাদের স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়াতে সহায়ক। তাই, একটি সুস্থ ও সুখী জীবনের জন্য শারীরিক ফিটনেসের গুরুত্ব অপরিসীম।

দৈনন্দিন জীবনে ফিটনেসের ভূমিকা

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক ফিটনেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি কাজেই আমাদের শরীরের কর্মক্ষমতার প্রয়োজন হয়। ভালো শারীরিক ফিটনেস থাকলে আমরা এই কাজগুলো সহজে ও দক্ষতার সাথে করতে পারি, ক্লান্তি কম অনুভব করি এবং দিনের শেষেও যথেষ্ট শক্তি পাই। এর ফলে আমাদের কাজের উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং আমরা ব্যক্তিগত জীবনে আরও বেশি সময় ও উদ্যম দিতে পারি।

শারীরিক ফিটনেস আমাদের সামাজিক জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যখন আমরা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকি, তখন আমরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উৎসাহের সাথে অংশগ্রহণ করতে পারি এবং অন্যদের সাথে সহজে মিশতে পারি। খেলাধুলা বা দলগত ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। তাই, দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ ও সক্রিয় থাকার জন্য শারীরিক ফিটনেস একটি অপরিহার্য উপাদান।

ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম জানতে পোস্টটি পড়ে নিন।

শারীরিক ফিটনেসের উপাদানসমূহ

শারীরিক ফিটনেসের উপাদানসমূহ

আমাদের শরীরকে ফিট রাখতে হলে কয়েকটা জিনিস খুব দরকারি। এগুলো হলো:

  • দম বা স্ট্যামিনা (Endurance): এর মানে হলো একটানা অনেকক্ষণ ধরে কোনো কাজ করতে পারা। যেমন – দীর্ঘক্ষণ দৌড়ানো বা সাঁতার কাটার জন্য ভালো দম লাগে। দম ভালো থাকলে সহজে ক্লান্তি আসে না।
  • শক্তি (Strength): এটা হলো পেশি কতটা জোর লাগাতে পারে। যেমন – ভারী জিনিস তোলা বা ধাক্কা দেওয়ার জন্য শক্তির প্রয়োজন। শক্তিশালী পেশি আমাদের রোজকার কাজগুলো সহজে করতে সাহায্য করে।
  • গতি (Speed): এর মানে হলো খুব কম সময়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারা। যেমন – দৌড় প্রতিযোগিতায় ভালো ফল করার জন্য গতির দরকার।
  • নমনীয়তা (Flexibility): এটা হলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কতটা সহজে ভাঁজ করা বা ঘোরানো যায়। যেমন – মাটিতে হাত লাগাতে পারা বা বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম করার জন্য নমনীয়তা প্রয়োজন। নমনীয়তা থাকলে শরীরে টান লাগা বা আঘাত লাগার ঝুঁকি কমে।
  • সমন্বয় (Coordination): এর মানে হলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ একসাথে মিলেমিশে কাজ করতে পারা। যেমন – ক্রিকেট খেলার সময় বল ধরা ও ছোড়া, অথবা নাচের সময় হাত-পায়ের সঠিক মুভমেন্টের জন্য সমন্বয় দরকার।

শারীরিক ফিটনেস অর্জনের উপায়

শারীরিক ফিটনেস অর্জনের উপায়

নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যক্রম

শারীরিক ফিটনেস অর্জনের অন্যতম প্রধান উপায় হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং বিভিন্ন শারীরিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য মাঝারি ধরণের ব্যায়াম, যেমন – দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা অথবা সাইকেল চালানো আমাদের হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি সপ্তাহে কয়েক দিন পেশী শক্তিশালী করার ব্যায়াম, যেমন – ওজন তোলা বা পুশ-আপ করা শরীরের শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করে।

ব্যায়ামকে অভ্যাসে পরিণত করার জন্য প্রথমে ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত এবং ধীরে ধীরে ব্যায়ামের তীব্রতা ও সময় বাড়ানো যেতে পারে। নিজের পছন্দের ব্যায়াম খুঁজে বের করা এবং সেটিকে আনন্দের সাথে করাটা জরুরি, যাতে এটি দীর্ঘস্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হয়। মনে রাখতে হবে, অল্প সময়ের জন্যও নিয়মিত ব্যায়াম করা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন থেকে অনেক ভালো।

খেলাধুলা (ক্রিকেট, ফুটবল, সাঁতার, দৌড়, যোগব্যায়াম ইত্যাদি)

খেলাধুলা শারীরিক ফিটনেস অর্জনের একটি মজাদার এবং কার্যকর উপায়। ক্রিকেট, ফুটবল, সাঁতার, দৌড়ানো এবং যোগব্যায়ামের মতো বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা আমাদের শরীরের বিভিন্ন পেশীকে সক্রিয় রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। খেলাধুলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে দলবদ্ধভাবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি হয় এবং সামাজিক সম্পর্ক উন্নত হয়।

প্রতিটি খেলার নিজস্ব উপকারিতা রয়েছে। ক্রিকেট ও ফুটবলের মতো খেলাধুলা আমাদের দৌড়ানো ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়, সাঁতার শরীরের প্রায় সকল পেশীর ব্যায়াম ঘটায় এবং দৌড়ানো আমাদের হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। যোগব্যায়াম শরীরকে নমনীয় করে, মানসিক শান্তি এনে এবং শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই, নিজের আগ্রহ অনুযায়ী যেকোনো একটি বা একাধিক খেলাধুলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

দৈনন্দিন সহজ ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার জন্য দৈনন্দিন জীবনে কিছু সহজ ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এর জন্য জিমে যাওয়ার বা বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না। যেমন – প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় ১০-১৫ মিনিটের জন্য হালকা জগিং, স্কিপিং, বুকডন বা যোগা করা যেতে পারে। এছাড়াও, কাজের ফাঁকে বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর কিছু স্ট্রেচিং করা শরীরের জড়তা কমায় এবং রক্ত চলাচল বাড়াতে সাহায্য করে।

ঘাড় ঘোরানো, হাত ও পায়ের পাতা ঘোরানো, কোমরের ব্যায়াম এবং বিভিন্ন প্রকার পেশী প্রসারিত করার ব্যায়াম দৈনন্দিন রুটিনে যোগ করা যেতে পারে। এই ছোট ছোট ব্যায়ামগুলো আমাদের শরীরকে সচল রাখে, পেশীগুলোকে নমনীয় করে এবং আঘাতের ঝুঁকি কমায়। দৈনন্দিন জীবনে এই সহজ ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আমরা আমাদের শারীরিক ফিটনেসকে আরও উন্নত করতে পারি।

ফিটনেস রুটিন ও পরিকল্পনা

শারীরিক ফিটনেস অর্জনের জন্য একটি সুপরিকল্পিত রুটিন তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো ফিটনেস রুটিনে আপনার সাপ্তাহিক ব্যায়ামের ধরণ, সময় এবং তীব্রতা উল্লেখ থাকবে। প্রথমে নিজের শারীরিক সক্ষমতা এবং লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। ধীরে ধীরে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

আপনার রুটিনে বিভিন্ন ধরণের ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যেমন – কার্ডিও (দৌড়ানো, সাঁতার), শক্তি প্রশিক্ষণ (ওজন তোলা) এবং নমনীয়তার ব্যায়াম (যোগা, স্ট্রেচিং)। প্রতিদিন একই ধরণের ব্যায়াম না করে বিভিন্নতা আনলে শরীর আরও ভালোভাবে উপকৃত হয় এবং একঘেয়েমিও দূর হয়। সময়ের সাথে সাথে নিজেরProgress পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে রুটিনে পরিবর্তন আনা উচিত। একজন প্রশিক্ষকের সাহায্য নিয়ে একটি উপযুক্ত ফিটনেস রুটিন তৈরি করা যেতে পারে, যা আপনার জন্য সবচেয়ে কার্যকর হবে।

কোন কোন খাবার খেলে তাড়াতাড়ি মোটা হওয়া যায় জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

ফিটনেসের সহায়ক হিসেবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি গ্রহণ

ফিটনেসের সহায়ক হিসেবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি গ্রহণ

সুষম খাদ্য ও হাইড্রেশন

শারীরিক ফিটনেস অর্জনের জন্য যেমন নিয়মিত ব্যায়াম জরুরি, তেমনি একটি সুষম খাদ্যাভ্যাসও অপরিহার্য। সুষম খাদ্য বলতে বোঝায় এমন খাবার গ্রহণ করা, যেখানে শরীরের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান – যেমন শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ লবণ সঠিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়, পেশী গঠনে সাহায্য করে এবং শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।

পাশাপাশি, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করাও শারীরিক ফিটনেসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাইড্রেশন আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, হজমক্ষমতাকে উন্নত করে এবং ব্যায়ামের সময় শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করা উচিত। ব্যায়ামের আগে, চলাকালীন এবং পরেও পর্যাপ্ত জল পান করা বিশেষভাবে জরুরি।

পুষ্টিকর খাবার ও ডায়েট প্ল্যান

শারীরিক ফিটনেসকে সমর্থন করার জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং একটি সঠিক ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করা দরকার। প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার ত্যাগ করে ফল, সবজি, শস্য, প্রোটিন (যেমন মাছ, মাংস, ডিম, ডাল) এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (যেমন বাদাম, বীজ, অলিভ অয়েল) খাবারের তালিকায় যোগ করা উচিত। এই খাবারগুলো আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং শরীরকে সতেজ রাখে।

একটি ব্যক্তিগত ডায়েট প্ল্যান তৈরি করার জন্য একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। আপনার বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক কার্যকলাপের স্তর এবং স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর ভিত্তি করে তিনি একটি উপযুক্ত খাদ্য তালিকা তৈরি করে দেবেন। মনে রাখতে হবে, ডায়েট মানে না খেয়ে থাকা নয়, বরং সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা।

ফিটনেস ওজন নিয়ন্ত্রণে পুষ্টির ভূমিকা

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার ক্ষেত্রে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পুষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে ওজন নিয়ন্ত্রণে। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং শারীরিক কার্যকলাপকে কঠিন করে তোলে। একটি সুষম খাদ্য গ্রহণ করে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ এড়িয়ে আমরা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি।

পুষ্টিকর খাবার আমাদের দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার (যেমন ফল, সবজি, শস্য) হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রোটিন পেশী গঠনে সাহায্য করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়, যা ওজন কমাতে সহায়ক। তাই, ফিটনেস ওজন বজায় রাখার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পুষ্টির জ্ঞান অপরিহার্য।

রোজার মাসে ওজন কমানোর বিশেষ উপায় জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

ফিটনেসের উপকারিতা

ফিটনেসের উপকারিতা

শারীরিক স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ

শারীরিক ফিটনেস আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের হৃদপিণ্ড ও রক্তনালীকে শক্তিশালী করে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক রাখতে ভূমিকা রাখে। শারীরিক কার্যকলাপ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা বিভিন্ন সংক্রমণ ও অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, নিয়মিত ব্যায়াম ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। এটি হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে, অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমায় এবং পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে, যা আঘাতের সম্ভাবনা হ্রাস করে। সামগ্রিকভাবে, শারীরিক ফিটনেস একটি সুস্থ ও রোগমুক্ত জীবন যাপনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

মানসিক প্রশান্তি ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি

শারীরিক ফিটনেস শুধু আমাদের শরীরকেই সুস্থ রাখে না, এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ব্যায়ামের সময় আমাদের মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মনকে প্রফুল্ল করে এবং মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ ঘুমের গুণগত মান উন্নত করে, যা আমাদের মনকে সতেজ রাখে এবং দিনের বেলা মনোযোগ বাড়াতে সহায়ক।

শারীরিকভাবে ফিট থাকলে আমরা নিজেদের শরীর সম্পর্কে আরও আত্মবিশ্বাসী বোধ করি। নিজের লক্ষ্য অর্জন এবং শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের আত্মসম্মান এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এটি আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহস যোগায়।

কর্মক্ষমতা ও একাগ্রতা বৃদ্ধি

শারীরিক ফিটনেস আমাদের দৈনন্দিন কর্মক্ষমতা এবং একাগ্রতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন আমাদের শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকে, তখন আমরা যেকোনো কাজ আরও উদ্যম ও দক্ষতার সাথে করতে পারি। নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে আমাদের শরীরে শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ক্লান্তি কম অনুভূত হয়, যা দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ক্ষমতা যোগায়।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির সাথে সাথে আমাদের মনোযোগ ও একাগ্রতাও বৃদ্ধি পায়। ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ায়, যা স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতাকে উন্নত করে। এর ফলে পড়াশোনা বা কাজের ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট থাকলে আমাদের কর্মজীবনে সাফল্য লাভের সম্ভাবনাও বাড়ে।

সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন

শারীরিক ফিটনেস একটি সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন যাপনের চাবিকাঠি। যারা নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করেন এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করেন, তাদের বিভিন্ন মারাত্মক রোগ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। এর ফলে তারা দীর্ঘকাল সুস্থ ও সক্রিয় জীবন যাপন করতে পারেন।

শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার কারণে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। আমরা আমাদের পছন্দের কাজগুলো করতে পারি, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারি এবং জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারি। শারীরিক ফিটনেস শুধু আমাদের জীবনের বছর সংখ্যাই বাড়ায় না, বরং সেই বছরগুলোতে সুস্থ ও আনন্দময় জীবন যাপন করতে সাহায্য করে।

কোনো রকম ওষুধ ছাড়া ১৫ দিনে মোটা হওয়ার সহজ উপায়গুলো এই পোস্টের মাধ্যমে জেনে নিন।

ফিটনেস ধরে রাখার সমস্যা আর তার সহজ সমাধান

ফিটনেস ধরে রাখার সমস্যা আর তার সহজ সমাধান

ফিটনেস ধরে রাখা কিন্তু সহজ কাজ না। রাস্তায় যেমন স্পিড ব্রেকার থাকে, তেমনি ফিট থাকার পথেও অনেক বাধা আসে। তবে চিন্তা নেই, কিছু সহজ উপায় জানলে এগুলো পেরোনো যায়।

সময়ের অভাব

অনেকেরই মনে হয়, “আরে বাবা! ব্যায়াম করার সময় কই?” কাজের চাপ, সংসারের ঝামেলা – লেগেই তো থাকে।

সমাধান: একটু বুদ্ধি করে সময় বের করতে হবে। ভাবুন তো, দিনের কোন সময়টা একটু ফাঁকা থাকে? সকালে ঘুম থেকে একটু আগে ওঠা যায়? অফিসের লাঞ্চের পরে ১০ মিনিট হাঁটা যায়? সন্ধ্যায় টিভি দেখার আগে একটু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করা যায়? ছোট ছোট সময় বের করেও কিন্তু কাজ হয়। আর এখন তো কত অনলাইন ক্লাস! ঘরে বসেই যখন খুশি একটু ব্যায়াম করে নেওয়া যায়।

মন না বসা (অনুপ্রেরণা ধরে রাখা)

প্রথম প্রথম খুব উৎসাহ থাকে, কিন্তু কিছুদিন পর মনে হয় “ধুর! আর ভালো লাগছে না।”

সমাধান: মনকে বোঝাতে হবে, এটা শুধু আজকের জন্য না, ভবিষ্যতের জন্যেও দরকারি। নিজের একটা ছোটখাটো লক্ষ্য ঠিক করুন – যেমন, “এই মাসে আমি এতবার হাঁটব।” যখন সেই লক্ষ্যে পৌঁছাবেন, নিজের কাছেই ভালো লাগবে। বন্ধুদের সাথে বা পরিবারের সাথে ব্যায়াম শুরু করতে পারেন। একসাথে করলে Motivation থাকে। নতুন নতুন ব্যায়ামের ভিডিও দেখতে পারেন, যাতে একঘেয়েমি না লাগে। আর হ্যাঁ, ছোটখাটো কিছু অর্জন হলেও নিজেকে বাহবা দিতে ভুলবেন না!

ব্যস্ত জীবনে ফিটনেস রুটিন ধরে রাখা

একদিন সব ঠিকঠাক চলল, কিন্তু হঠাৎ একটা কাজ এসে গেল বা কোথাও যেতে হলো – তখন রুটিন ভেঙে যায়।

সমাধান: একটা “যেমন খুশি তেমন করো” (Flexible) রুটিন বানান। মানে, যদি জিমে যাওয়ার সময় না থাকে, সেদিন বাড়িতেই কিছু হালকা ব্যায়াম করলেন। অথবা, সেদিন একটু বেশি হাঁটলেন। জরুরি কাজ থাকলে ব্যায়াম বাদ না দিয়ে, কম সময়ের জন্য হলেও করুন। আর মনে রাখবেন, একদিন বাদ পড়লে আকাশ ভেঙে পড়বে না, পরের দিন আবার শুরু করতে হবে। সবচেয়ে জরুরি হলো হাল না ছাড়া এবং চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

নিরাপত্তা ও প্রাথমিক চিকিৎসা

শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হলে যেমন নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি, তেমনি এর সময় নিরাপত্তা বজায় রাখাও খুব দরকারি। যেকোনো ধরনের আঘাত বা দুর্ঘটনা এড়াতে খেলার শুরুতে হালকা গরমের ব্যায়াম করতে হবে। নিজের শরীরের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত exertion করা উচিত না। খেলার মাঠ বা জায়গাটি নিরাপদ কিনা, যেমন – ধারালো কিছু পড়ে আছে কিনা বা মাটি অসমান কিনা, তা ভালোভাবে দেখে নিতে হবে।

সঠিক পোশাক ও সরঞ্জাম ব্যবহার করাটাও জরুরি, যেমন – দৌড়ানোর জন্য ভালো জুতো পরা বা সাইকেল চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহার করা। ক্লান্ত লাগলে বা ব্যথা অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। প্রচণ্ড গরম বা রোদের মধ্যে বেশিক্ষণ ব্যায়াম করা উচিত না এবং শরীরকে সতেজ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা দরকার।

যদি খেলার সময় কোনো ছোটখাটো আঘাত লাগে, যেমন – কেটে যাওয়া বা ছড়ে যাওয়া, তাহলে প্রথমে ক্ষতস্থান পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে জীবাণুনাশক লাগাতে হবে এবং পরিষ্কার কাপড় বা ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মোচ লাগলে বা আঘাত পেলে সেই জায়গায় বরফ লাগিয়ে উঁচু করে রাখতে হবে এবং বিশ্রাম নিতে হবে। বেশি ব্যথা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, সামান্য সতর্কতা অবলম্বন করলেই অনেক বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব এবং ফিটনেস ধরে রাখার পথ আরও মসৃণ হতে পারে।

ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগ

শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় ধরনের উদ্যোগই অপরিহার্য। ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত ঘুমের পাশাপাশি সামাজিক স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সুযোগ তৈরি করা দরকার। একটি ‘ভালো থাকা’ ক্লাব বা ফিটনেস কমিউনিটি গঠন করে সমমনা মানুষদের একত্রিত করা যেতে পারে, যেখানে সকলে মিলেমিশে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ফিটনেস চর্চা করতে উৎসাহিত হবে। পরিবার ও বন্ধুদের ফিটনেসের গুরুত্ব বুঝিয়ে তাদের সাথে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়া পারস্পরিক উৎসাহ যোগাতে পারে।

স্কুল, কলেজ এবং স্থানীয় কমিউনিটিতে ফিটনেস কার্যক্রম চালু করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে যুব সমাজ এবং বয়স্ক ব্যক্তিরাও সুস্থ জীবনशैली অনুসরণে আগ্রহী হবে। খেলাধুলার আয়োজন, ওয়াকিং গ্রুপ তৈরি করা অথবা যোগা ক্লাসের ব্যবস্থা করা কমিউনিটির সকলকে সক্রিয় রাখতে সহায়ক হতে পারে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একটি স্বাস্থ্যকর ও ফিট সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

ফিটনেস মূল্যায়ন ও ট্র্যাকিং

ফিটনেস মূল্যায়ন ও ট্র্যাকিং

নিজের ফিটনেস কতটা ভালো হচ্ছে, তা মাপা ও খেয়াল রাখা

আমরা যখন ফিট থাকার চেষ্টা করি, তখন মাঝে মাঝে দেখা দরকার আমরা কতটা উন্নতি করছি। প্রথমে ঠিক করতে হবে আমরা কী পেতে চাই – হয়তো ওজন কমাতে চাই, অথবা ভালো দৌড়াতে শিখতে চাই। এরপর আমরা নানাভাবে দেখতে পারি কতটা এগোচ্ছি। একটা ডায়েরিতে রোজকার ব্যায়ামের কথা লিখে রাখতে পারি, যেমন কতক্ষণ দৌড়ালাম বা কী ব্যায়াম করলাম। आजकल মোবাইলে অনেক অ্যাপ আছে যা আমাদের হাঁটাচলার হিসাব রাখে। আমরা একটা তালিকাও বানাতে পারি যেখানে দেখতে পারব আগে কত দ্রুত দৌড়াতে পারতাম আর এখন কত দ্রুত পারি।

অন্যদের কথা শোনা

আমাদের শিক্ষক, বাবা-মা আর বন্ধুদের কাছ থেকেও আমরা জানতে পারি আমাদের ফিটনেস কেমন হচ্ছে। যারা আমাদের খেলাধুলা বা ব্যায়াম করতে দেখে, তারা ভালো বলতে পারবে আমরা আগের থেকে ভালো করছি কিনা। শিক্ষকের পরামর্শ আমাদের সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করতে সাহায্য করে। বন্ধুদের সাথে তুলনা করলে আমরা বুঝতে পারি আমাদের আরও কতটা চেষ্টা করতে হবে। আর বাবা-মায়ের উৎসাহ তো সবসময়ই দরকারি। তাই তাদের কথা শুনে আমরা আরও ভালোভাবে নিজেদের ফিট রাখার চেষ্টা করতে পারি।

আধুনিক প্রযুক্তি ও ফিটনেস

আধুনিক প্রযুক্তি আর ফিটনেস

এখনকার দিনে ফিট থাকার জন্য অনেক নতুন জিনিস এসেছে। আমাদের মোবাইল ফোনের অ্যাপ এবং হাতে পরার স্মার্ট ঘড়ি (ওয়্যারেবল ডিভাইস) খুব কাজে দেয়। এই অ্যাপগুলো আমরা কতক্ষণ হাঁটলাম, কত ক্যালোরি খরচ হলো, এমনকি আমাদের ঘুমের হিসাবও রাখতে পারে।

ইন্টারনেটের ক্লাস আর শেখানোর ভিডিও

ইন্টারনেটে এখন অনেক ফিটনেস ক্লাস আর ভিডিও পাওয়া যায়। ঘরে বসেই আমরা যোগা, জুম্বা বা অন্য কোনো ব্যায়াম শিখতে পারি। বিভিন্ন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক অনলাইনে লাইভ ক্লাস করান অথবা তাদের শেখানো ভিডিও ছেড়ে রাখেন, যা দেখে আমরা সহজেই ব্যায়াম করতে পারি।

সোশ্যাল মিডিয়া আর ফিটনেস ব্লগ

ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন অনেক ফিটনেস পেজ ও ব্লগ আছে। সেখানে অনেকে তাদের শরীরচর্চার অভিজ্ঞতা, ডায়েট প্ল্যান এবং বিভিন্ন টিপস শেয়ার করেন। এগুলো দেখে আমরাও উৎসাহ পেতে পারি এবং নতুন কিছু শিখতে পারি। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সব তথ্য যেন সঠিক হয়।

সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ) ও টিপস

ফিটনেস নিয়ে আমাদের অনেকের মনেই কিছু ভুল ধারণা বাসা বেঁধে থাকে। আবার যারা এই পথে নতুন, তারা হয়তো বুঝতে পারেন না কীভাবে শুরু করবেন। আর আমরা তো চাই সবকিছু চটজলদি হোক! তাই, আসুন এই বিষয়গুলো একটু সহজ করে জেনে নিই।

ফিটনেস নিয়ে কিছু ভুল ধারণা

ফিটনেস নিয়ে কিছু ভুল ধারণা

আমরা হয়তো শুনি যে শুধু দৌড়ালেই বুঝি শরীর ফিট থাকে। কিন্তু এটা পুরোপুরি সত্যি নয়। আমাদের শরীরের পেশিগুলোকেও শক্তিশালী করতে হয়, যেমন ভারী জিনিস তোলা বা পুশ-আপ করার মাধ্যমে। ভাবুন, একটা বিল্ডিং শুধু পিলার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, তার দেওয়ালও দরকার। তেমনই, শুধু দৌড়ানো কার্ডিও ব্যায়াম, আর ওজন তোলা বা অন্য শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম আমাদের পেশিকে মজবুত করে। দুটোই দরকারি!

আবার অনেকে মনে করেন, যত বেশি ব্যায়াম করা যায়, ততই বুঝি ভালো। কিন্তু আমাদের শরীর একটা মেশিনের মতো। একটানা কাজ করলে যেমন মেশিন গরম হয়ে যায়, তেমনই বেশি ব্যায়াম করলে আমাদের শরীরেও ক্লান্তি আসে, এমনকি চোট লাগতে পারে। তাই, ব্যায়ামের পাশাপাশি শরীরকে বিশ্রাম দেওয়াটাও খুব জরুরি, যাতে পেশিগুলো আবার কাজ করার জন্য তৈরি হতে পারে।

ওজন কমানোর জন্য বা ফিট থাকার জন্য না খেয়ে থাকার ধারণাটাও ভুল। না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং প্রয়োজনীয় শক্তি পায় না। বরং, আমাদের সঠিক সময়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত – যেমন ফল, সবজি, শস্য আর ডিম-মাংসের মতো প্রোটিন। ফাস্ট ফুড বা মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলো এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

অনেকে হয়তো মনে করেন, ফিট থাকার জন্য দামি দামি সাপ্লিমেন্ট (যেমন প্রোটিন পাউডার) খেতেই হবে। আসলে, আমাদের রোজকার খাবারের মধ্যেই যথেষ্ট পুষ্টি থাকে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এসব সাপ্লিমেন্ট না খাওয়াই ভালো। হ্যাঁ, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে হয়তো দরকার হতে পারে, কিন্তু সেটা যেন কখনোই আমাদের আসল খাবারের বিকল্প না হয়।

আর একটা ভুল ধারণা হলো, শুধু জিমে গেলেই বুঝি ফিট হওয়া যায়। জিম অবশ্যই ভালো, সেখানে অনেক সরঞ্জাম থাকে। কিন্তু দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো বা বাড়িতে কিছু ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়ামও কিন্তু খুব কাজের। আসল কথা হলো, শরীরকে সচল রাখা।

যারা নতুন শুরু করছেন, তাদের জন্য কিছু সহজ টিপস

যদি আপনি এই প্রথম ফিটনেস নিয়ে কিছু করতে শুরু করছেন, তাহলে তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। প্রথমে ধীরে ধীরে শুরু করুন। হয়তো প্রথম কয়েক দিন অল্প সময় হাঁটলেন বা হালকা কিছু ব্যায়াম করলেন। নিজের শরীরের উপর বেশি চাপ দেবেন না।

এরপর ছোট ছোট কিছু লক্ষ্য ঠিক করুন। যেমন, এই সপ্তাহে আপনি ১৫ মিনিট হাঁটবেন অথবা ৫টা পুশ-আপ দেবেন। যখন এই ছোট লক্ষ্যগুলো পূরণ হবে, তখন আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং আপনি আরও বেশি করার জন্য উৎসাহিত হবেন।

সবচেয়ে জরুরি হলো নিয়মিত হওয়া। সপ্তাহে অন্তত কয়েক দিন একটা নির্দিষ্ট সময় ব্যায়ামের জন্য বের করুন এবং চেষ্টা করুন সেই নিয়মটা মেনে চলতে। একদিন করলেন, দশ দিন করলেন না – এমনটা যেন না হয়।

ব্যায়ামটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন। যে ধরনের কাজ করতে আপনার ভালো লাগে, সেটাই বেছে নিন। নাচতে ভালো লাগলে নাচুন, দৌড়াতে ভালো লাগলে দৌড়ান। জোর করে কিছু করলে বেশি দিন ধরে সেটা চালিয়ে যাওয়া কঠিন।

আপনার খাবারের দিকেও খেয়াল রাখুন। বেশি করে ফল, সবজি খান। রুটি, ভাত বা আলুর মতো শস্য এবং ডিম, মাছ, মাংস বা ডালের মতো প্রোটিন রাখুন আপনার খাবারের তালিকায়। চিনি দেওয়া পানীয় আর ভাজাভুজি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।

শরীরকে যথেষ্ট বিশ্রাম দেওয়াও খুব জরুরি। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার, যাতে আপনার শরীর পরের দিনের জন্য তৈরি হতে পারে।

আর মনে রাখবেন, ফিটনেস একদিনের কোনো ব্যাপার না। এটা একটা লম্বা পথ। তাই ধৈর্য ধরুন এবং চেষ্টা চালিয়ে যান। যদি কোনো কিছু বুঝতে অসুবিধা হয়, তাহলে একজন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক বা কারো কাছ থেকে সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না।

তাড়াতাড়ি ফিট হওয়ার চেষ্টা

আমরা সবাই চাই সবকিছু তাড়াতাড়ি হোক, ফিটনেসও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে মনে রাখবেন, রাতারাতি ফিট হওয়ার কোনো জাদু নেই। তাড়াহুড়ো করতে গেলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবুও, কিছু জিনিস মেনে চললে তুলনামূলকভাবে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে:

একটু বেশি কষ্টের ব্যায়াম করতে পারেন, যেমন হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং (HIIT)। এতে অল্প সময়ের জন্য খুব জোরে ব্যায়াম করতে হয়, তারপর একটু বিশ্রাম। এটা ক্যালোরি দ্রুত বার্ন করতে সাহায্য করে।

এমন ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন যেখানে আপনার শরীরের অনেক পেশি একসাথে কাজ করে, যেমন স্কোয়াট (উবু হওয়া), ডেডলিফট (ভারী জিনিস তোলা) বা বেঞ্চ প্রেস (বুকে ওজন তোলা)। তবে এই ব্যায়ামগুলো সঠিকভাবে করার জন্য প্রথমে শিখে নেওয়া জরুরি, না হলে চোট লাগতে পারে।

ধীরে ধীরে আপনার ব্যায়ামের তীব্রতা বাড়ান। ধরুন, আপনি প্রথমে ৫ কেজি ওজন তুলতেন, কিছুদিন পর সেটা ৬ কেজি করার চেষ্টা করুন। অথবা, আগে ১০টা পুশ-আপ দিতেন, এখন ১১টা দেওয়ার চেষ্টা করুন। এটাকে বলে প্রোগ্রেসিভ ওভারলোড।

ব্যায়ামের পর প্রোটিনযুক্ত খাবার খান। প্রোটিন আমাদের পেশি তৈরি করতে সাহায্য করে। ডিম, দুধ, দই, ডাল বা মাংস – এগুলো ভালো প্রোটিনের উৎস।

শরীরকে যথেষ্ট বিশ্রাম দিন। দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য অনেকে বেশি ব্যায়াম করেন, কিন্তু বিশ্রাম না দিলে পেশি ঠিক হওয়ার সময় পায় না এবং উন্নতি ব্যাহত হয়।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা জরুরি, বিশেষ করে যখন আপনি ব্যায়াম করছেন।

আর সবচেয়ে জরুরি হলো – আপনার লক্ষ্যের দিকে মনোযোগ রাখা এবং নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। একদিন বাদ দিয়ে আরেক দিন করলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া কঠিন।

তবে আবারও বলছি, তাড়াতাড়ি ফল পাওয়ার জন্য খুব বেশি চেষ্টা করতে গিয়ে নিজের শরীরের ক্ষতি করবেন না। সুস্থ থাকা এবং একটা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করাই আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ফিটনেস একটা ম্যারাথনের মতো, স্প্রিন্ট নয়। ধীরে ধীরে চলুন, কিন্তু নিয়মিত চলুন।

 

আপনার ফিটনেস সম্পর্কিত যেকোনো পরামর্শ পেতে – 01711794071 , 01753631846 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ফিট বে

Leave a Reply