ওজন কমানোর ক্ষেত্রে রাতের খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন রাতের খাবার বাদ দিলে ওজন দ্রুত কমে যায়, কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। দীর্ঘ সময় পেট খালি রাখলে হজমের সমস্যা হতে পারে এবং পরবর্তীতে বেশি খাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তাই, রাতের খাবার বাদ না দিয়ে সঠিক সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা ওজন কমানোর জন্য জরুরি। রাতের খাবার আমাদের শরীরের সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি ওজন কমাতে রাতের খাবার নিয়ে জানতে পারবেন।
স্বাস্থ্যকর ওজন কমানোর জন্য রাতের খাবার হালকা ও সহজে হজমযোগ্য হওয়া উচিত। প্রচুর তেল মসলাযুক্ত খাবার বা অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার রাতে খাওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, রাতের খাবারে প্রোটিন, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার যেমন – সবজি, সালাদ, ডাল, ডিম অথবা হালকা মাংসের পদ রাখা যেতে পারে। রাতের খাবার ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত, যাতে খাবার হজম হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা সম্ভব।
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম এই পোস্ট থেকে জেনে নিন।
ওজন কমাতে রাতের খাবারের ভূমিকা
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে রাতের খাবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন যে রাতের খাবার বাদ দিলে ওজন দ্রুত কমানো সম্ভব। তবে, দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া (Metabolism) ধীর হয়ে যায়। এর ফলে, শরীর কম ক্যালোরি খরচ করে এবং ওজন কমানোর প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। তাই, রাতের খাবার বাদ দেওয়া ওজন কমানোর সঠিক পদ্ধতি নয়। বরং, সঠিক সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা শরীরের জন্য জরুরি।
বিপাক ক্রিয়াকে সচল রাখতে এবং শরীরে শক্তি সরবরাহ করতে রাতের খাবারের গুরুত্ব অপরিহার্য। দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকলে শরীরে দুর্বলতা অনুভব হতে পারে এবং কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে। নিয়মিত রাতের খাবার গ্রহণ করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ স্বাভাবিক থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়। তাই, ওজন কমাতে রাতের খাবার বাদ না দিয়ে বরং তার গুণগত মানের উপর নজর দেওয়া উচিত।
রাতের খাবার বাদ দিলে ক্ষুধা বেড়ে যেতে পারে, যা পরের দিন বেশি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ায়। দীর্ঘ সময় পেট খালি থাকার কারণে শরীরে খাদ্য গ্রহণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। এর ফলে, সকালে বা দুপুরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ করার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
শুধু তাই নয়, রাতের খাবার না খেলে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে। রাতের খাবারের মাধ্যমে আমরা যে ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করি, তা শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। ক্ষুধা বেড়ে যাওয়ার কারণে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতাও বাড়ে, যা ওজন কমানোর প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করে দেয়। তাই, ওজন কমাতে রাতের খাবার পরিমিত পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে গ্রহণ করা উচিত।
ওজন কমানোর জন্য রাতের খাবার হতে হবে হালকা, পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য। রাতের খাবারে এমন খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যা সহজে হজম হয় এবং শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে বাধা দেয়। অতিরিক্ত তেল, মসলা বা চর্বিযুক্ত খাবার রাতের বেলা পরিহার করা উচিত। এর পরিবর্তে, প্রোটিন, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার যেমন – সবজি, সালাদ, ডাল, মাছ অথবা মুরগির হালকা ঝোল খাওয়া যেতে পারে।
সহজপাচ্য খাবার হজমতন্ত্রের উপর চাপ কমায় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় না। রাতের খাবারে জটিল শর্করা যেমন – সাদা ভাত বা রুটির পরিবর্তে লাল চালের ভাত বা আটার রুটি খাওয়া যেতে পারে। ফল এবং দইও রাতের খাবারের ভালো বিকল্প হতে পারে। মনে রাখতে হবে, রাতের খাবার ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে গ্রহণ করা উচিত, যাতে খাবার হজম হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।
সকালে খালি পেটে কি খেলে স্বাস্থ্য ঠিক থাকে তা জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
রাতের খাবারের সময় ও পরিমাণ
রাতের খাবার গ্রহণ করার সঠিক সময় এবং এর পরিমাণ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদর্শ নিয়ম হলো, ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে নেওয়া। এর ফলে খাবার হজম হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায় এবং রাতে ভরা পেটে ঘুমানোর কারণে হজমের যে সমস্যা হতে পারে, তা এড়ানো যায়। তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেলে শরীর খাবারের পুষ্টি উপাদানগুলো ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে এবং ঘুমের সময় হজম প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।
রাতের খাবার দিনের অন্যান্য সময়ের খাবারের তুলনায় হালকা হওয়া উচিত। দিনের বেলা আমাদের শারীরিক পরিশ্রম বেশি থাকে বলে ভারী খাবার হজম করা সহজ হয়। কিন্তু রাতে যেহেতু তেমন কোনো কাজ থাকে না, তাই হালকা ও সহজে হজমযোগ্য খাবার খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অতিরিক্ত তেল, মসলা বা চর্বিযুক্ত খাবার রাতে খেলে তা শরীরে মেদ হিসেবে জমা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই, রাতের মেনুতে কম ক্যালোরি এবং বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার যেমন – সবজি, ডাল, মাছ অথবা মুরগির হালকা ঝোল রাখা যেতে পারে।
শারীরিক ফিটনেস সম্পর্কে জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
ওজন কমাতে রাতের জন্য উপযোগী খাবার
ওজন কমানোর জন্য রাতের খাবারে কিছু খাবার বিশেষভাবে সহায়ক হতে পারে। রাতের খাবার হালকা হওয়া উচিত, যা সহজে হজম হয় এবং শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে বাধা দেয়। প্রোটিন ও ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন – বিভিন্ন সবজি, সালাদ, ডাল, ডিম, হালকা মাছ বা মুরগির মাংস রাতের জন্য ভালো। এগুলো পেট ভরা রাখে এবং তাড়াতাড়ি ক্ষুধা লাগে না। শস্যের মধ্যে লাল চালের ভাত বা আটার রুটি অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, রাতের খাবারে যেন অতিরিক্ত তেল, মসলা বা চিনি না থাকে এবং ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই-তিন ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত। আরও বিস্তারিত আপনাদের জন্য দেওয়া হলোঃ
- শর্করা ও কার্বোহাইড্রেটঃ রাতের খাবারে শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। অতিরিক্ত শর্করা শরীরে মেদ হিসেবে জমা হতে পারে। এক্ষেত্রে, এক কাপের মতো ভাত অথবা দুটি-তিনটি আটার রুটি যথেষ্ট। সাদা চালের ভাতের তুলনায় লাল চালের ভাত অথবা আটার রুটি বেশি স্বাস্থ্যকর, কারণ এগুলোতে ফাইবার বেশি থাকে যা হজম হতে সময় নেয় এবং পেট ভরা অনুভব করায়। ওটস এবং যব-এর মতো খাবারও রাতের খাবারের জন্য ভালো বিকল্প হতে পারে।
- প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারঃ রাতের খাবারে প্রোটিন যোগ করা খুবই জরুরি। প্রোটিন পেশি গঠনে সাহায্য করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে রাতে বা পরের দিন সকালে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে। ডিমের সাদা অংশে ফ্যাট কম থাকে এবং এটি প্রোটিনের ভালো উৎস। চর্বিহীন মাছ বা মুরগির মাংসও প্রোটিনের চমৎকার উৎস। যারা নিরামিষাশী, তারা ডাল, ছোলা এবং তোফু-এর মতো খাবার প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারেন।
- শাকসবজি ও সালাদঃ রাতের খাবারে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও সালাদ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। শাকসবজিতে ক্যালোরি কম থাকে এবং ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে ভরপুর থাকে। পাতাজাতীয় সবজি এবং আঁশযুক্ত সবজি হজমক্ষমতাকে উন্নত করে এবং পেট ভরা অনুভব করায়। কাঁচা সালাদ যেমন শসা, টমেটো, গাজর ইত্যাদি রাতের খাবারের সাথে খাওয়া স্বাস্থ্যকর।
- ফলমূলঃ রাতের খাবারে কিছু নির্দিষ্ট ফল খাওয়া যেতে পারে, তবে মিষ্টি ফল এড়িয়ে যাওয়া ভালো। আপেল, পেয়ারা, কমলা, পেঁপে এবং নাসপাতির মতো ফলে প্রাকৃতিক চিনি কম থাকে এবং ফাইবার বেশি থাকে। মিষ্টি ফল যেমন আম, কলা, লিচু ইত্যাদিতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় এগুলো রাতে না খাওয়াই ভালো।
- দুগ্ধজাত খাবারঃ রাতের খাবারে টক দই বা গ্রিক ইয়োগার্ট একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এগুলোতে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম থাকে এবং এটি হজমক্ষমতার উন্নতিতেও সাহায্য করে। কম চর্বিযুক্ত দুধও পান করা যেতে পারে, তবে যাদের ল্যাকটোজের সমস্যা আছে তাদের এটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
- বাদাম ও বীজঃ অল্প পরিমাণে বাদাম ও বীজ রাতের খাবারের সাথে যোগ করা যেতে পারে। আমন্ড এবং চিনাবাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন এবং ফাইবার থাকে। তবে, এগুলোতে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকায় অল্প পরিমাণে খাওয়াই উচিত। অন্যান্য বীজ যেমন কুমড়োর বীজ বা সূর্যমুখী বীজও পুষ্টিকর এবং রাতের খাবারের সাথে যোগ করা যেতে পারে।
কোন কোন খাবার খেলে তাড়াতাড়ি মোটা হওয়া যায় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
রাতের খাবারের নমুনা ডায়েট প্ল্যান
ডায়েট প্ল্যান | উপাদান | নির্দেশনা |
ভাত-ভিত্তিক | ভাত, মাছ/মুরগি, সবজি, ডাল, দই | ভাত ১ কাপ, মাছ/মুরগি ১ টুকরো, সবজি ১ কাপ, ডাল ১ কাপ, দই ১/২ কাপ |
রুটি-ভিত্তিক | আটার রুটি, ডিম/মাছ, সবজি, সালাদ | রুটি ২টি, ডিমের সাদা অংশ ২টি, সবজি ১ কাপ, সালাদ |
হালকা প্ল্যান | ওটস, দুধ, ফল, বাদাম | ওটস ১/২ কাপ, দুধ ১ কাপ, ফল ১টি, বাদাম ৫-৬টি |
রাতের খাবারের পর সহায়ক পানীয়
রাতের খাবার খাওয়ার পর কিছু পানীয় ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। হালকা গ্রিন টি বা বিভিন্ন হারবাল টি হজমক্ষমতাকে উন্নত করে এবং শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সহায়ক। গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর থাকে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও, গরম পানিতে লেবুর রস এবং আদা মিশিয়ে পান করলে তা হজমকে আরও সহজ করে তোলে এবং শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে বাধা দেয়। এই পানীয়গুলো রাতের বেলা শরীরকে সতেজ রাখতে এবং ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে। তবে, মনে রাখতে হবে যেন এই পানীয়গুলোতে চিনি বা মিষ্টি মেশানো না হয়।
কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন?
ওজন কমানোর জন্য রাতের বেলা কিছু খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত। অতিরিক্ত তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং শরীরে মেদ জমাতে সাহায্য করে। ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার, যেমন পাউরুটি এবং বিভিন্ন প্রসেসড খাবারগুলোতে পুষ্টিগুণ কম থাকে এবং এগুলো দ্রুত ওজন বাড়াতে পারে। মিষ্টি ও চিনিযুক্ত খাবার, এমনকি মিষ্টি দইও রাতের বেলা খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে থাকা চিনি শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করে। এছাড়াও, রাতের খাবার শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমাতে যাওয়া উচিত না। খাবার হজমের জন্য অন্তত দুই ঘণ্টা সময় দেওয়া প্রয়োজন।
অতিরিক্ত টিপস
ওজন কমানোর জন্য রাতের খাবারের অভ্যাসের পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত টিপস মেনে চলা জরুরি। রাতের খাবার শেষ করার পরপরই বিছানায় না গিয়ে কিছুক্ষণ হালকা হাঁটাহাঁটি করা হজমক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সচল রাখে এবং রাতের বেলাও শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে। ঘুমের সঠিক সময় বজায় রাখা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনিয়মিত ঘুম হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে যা ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কখনোই রাতের খাবার বাদ দেওয়া উচিত না। এর পরিবর্তে, পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক।
উপসংহার
ওজন কমাতে রাতের খাবার বাদ দেওয়ার ভুল ধারণা পরিহার করে সঠিক সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন করা বুদ্ধিমানের কাজ। রাতের খাবার আমাদের শরীরের কার্যকারিতা বজায় রাখতে এবং ঘুমের সময় পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। তাই, রাতের খাবারে হালকা, পুষ্টিকর এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার গ্রহণ করা উচিত। অতিরিক্ত তেল, মসলা বা চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করে প্রোটিন, ফাইবার ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার বেছে নেওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার জন্য কেবল রাতের খাবারের সঠিক নির্বাচনই যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করাও জরুরি। একটি সুষম ডায়েট, যেখানে দিনের অন্যান্য সময়ের খাবারও স্বাস্থ্যকর, ওজন কমানোর যাত্রাকে আরও সহজ করে তোলে। সুতরাং, ওজন কমাতে রাতের খাবারকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি একটি সামগ্রিক স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করা অপরিহার্য।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
১. রাতে না খেলে কি ওজন কমে?
উত্তরঃ রাতে না খেলে প্রাথমিকভাবে ওজন কমতে পারে, কারণ আপনি ক্যালোরি গ্রহণ করছেন না। তবে, এটি শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকলে আপনার বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, যা পরবর্তীতে ওজন কমানো কঠিন করে তোলে। এছাড়াও, রাতে না খেলে ক্ষুধা বেড়ে যেতে পারে এবং পরের দিন আপনি বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ করতে পারেন। তাই, ওজন কমানোর জন্য রাতের খাবার বাদ দেওয়া সঠিক উপায় নয়।
২. রাতে ঘুমানোর আগে রসুন খেলে কি হয়?
উত্তরঃ রাতে ঘুমানোর আগে রসুন খেলে কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে। রসুনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে, কাঁচা রসুন অনেকের জন্য হজম করা কঠিন হতে পারে এবং বুক জ্বালার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই, রাতে রসুন খাওয়ার আগে নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া জানা জরুরি।
৩. রাতে ঘুমানোর আগে কলা খেলে কি হয়?
উত্তরঃ রাতে ঘুমানোর আগে কলা খেলে তা শরীরে কিছু ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কলাতে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা মাংসপেশিকে শিথিল করতে এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। এছাড়াও, কলায় থাকা ফাইবার পেট ভরা রাখে এবং হজমক্ষমতাকে উন্নত করে। তবে, কলায় কিছুটা চিনিও থাকে, তাই ডায়াবেটিস বা ওজন নিয়ে সমস্যা থাকলে রাতে বেশি কলা খাওয়া উচিত নয়। পরিমিত পরিমাণে একটি কলা খাওয়া যেতে পারে।
৪. রাতে কোন খাবার খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ রাতে হালকা, পুষ্টিকর এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার খাওয়া উচিত। প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন – সবজি, সালাদ, ডাল, ডিম অথবা হালকা মাছ বা মুরগির মাংস রাতের জন্য ভালো। শস্যের মধ্যে লাল চালের ভাত বা আটার রুটি অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত তেল, মসলা এবং চিনিযুক্ত খাবার রাতের বেলা পরিহার করা উচিত। রাতের খাবার ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে খেলে তা হজমের জন্য যথেষ্ট সময় পায়।
৫. রাতে ঘুমানোর আগে ডিম খেলে কি হয়?
উত্তরঃ রাতে ঘুমানোর আগে ডিম খেলে তা শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা পেশি গঠনে সাহায্য করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। ডিম সহজে হজমযোগ্য এবং এতে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। তবে, যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে, তাদের ডিমের কুসুম পরিহার করে শুধু সাদা অংশ খাওয়া উচিত অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পরিমিত পরিমাণে ডিম রাতের খাবারের একটি স্বাস্থ্যকর অংশ হতে পারে।
যেকোনো ধরণের পরামর্শ পেতে – 01711794071 , 01753631846 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ফিট বে