You are currently viewing ইসবগুলের ভুসি খেলে কি মোটা হওয়া যায়?

ইসবগুলের ভুসি খেলে কি মোটা হওয়া যায়?

ভূমিকা

ইসবগুলের ভুসি নিয়ে অনেকের মনে একটা প্রশ্ন জাগে, তা হলো এটা খেলে ওজন বাড়ে নাকি কমে। আসলে, ইসবগুলের ভুসি কোনো শস্য বা দানাজাতীয় খাবার নয়। এটি প্ল্যান্টাগো ওভাটা নামক এক প্রকার গাছের বীজের খোসা। এই খোসায় প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার থাকে, যা হজমতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। তবে অনেকেই মনে করেন যেহেতু এটি খাবার এবং কিছুটা পেট ভরায়, তাই হয়তো এটি খেলে ওজন বাড়তে পারে। আমরা আমাদের এই পোস্টে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি মোটা হওয়া যায় বা যায় না, তা নিয়ে আলোচনা করেছি।

কিন্তু সত্যি কথা হলো, ইসবগুলের ভুসির মূল কাজ ওজন কমানোয় সাহায্য করা। এর দ্রবণীয় ফাইবার জল শোষণ করে পেটে ফোলে ওঠে, ফলে পেট ভরা অনুভূত হয়। এতে করে অন্যান্য খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়। এছাড়াও, এটি হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে এবং হঠাৎ করে ক্ষুধা লাগার অনুভূতি কমে যায়। তাই সঠিকভাবে ইসবগুলের ভুসি খেলে তা ওজন কমানোর প্রচেষ্টায় সহায়ক হতে পারে।

সুতরাং, ইসবগুলের ভুসি সরাসরি ওজন বাড়ায় না। বরং এর ফাইবার সমৃদ্ধ বৈশিষ্ট্য এবং জল ধারণের ক্ষমতা এটিকে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি ভালো উপায় হিসেবে পরিচিত করেছে। তবে হ্যাঁ, যদি কেউ অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় কিছুর সাথে মিশিয়ে ইসবগুলের ভুসি খায়, তবে সেক্ষেত্রে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এর সঠিক ব্যবহার এবং পরিমিত গ্রহণই মূল চাবিকাঠি।

ওজন কমাতে রাতের খাবার হিসেবে কি খাবেন তা এই পোস্ট থেকে জেনে নিন।

ইসবগুলের ভুসির কার্যকারিতা

ইসবগুলের ভুসির কার্যকারিতা

না। ইসবগুলের ভুসি খেলে কি মোটা হওয়া যায় না। বরং,  ইসবগুলের ভুসি আসলে আমাদের পেটের জন্য একটা দারুণ বন্ধু। এটা মূলত তৈরি হয় এক ধরনের গাছের বীজের খোসা থেকে। এই খোসার বিশেষত্ব হলো, এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে, আর এই ফাইবারটা কিন্তু সাধারণের মতো নয় – এটা পানির সাথে মেশালে খুব সহজেই জেলির মতো হয়ে যায়।

এখন ভাবুন, যখন আপনি ইসবগুলের ভুসি খান এবং তার সাথে পানি পান করেন, তখন এই ভুসি আপনার পেটের ভেতরে গিয়ে অনেকটা জায়গা জুড়ে নেয় এবং একটা জেলের মতো স্তর তৈরি করে। এর ফলে আপনার পেট অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভরা ভরা মনে হয়। যখন পেট ভরা থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অন্য খাবার খাওয়ার তেমন ইচ্ছে থাকে না। তাই বারবার খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ইসবগুলের ভুসিতে ক্যালোরি আর ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম। তার মানে আপনি পেট ভরা অনুভব করছেন অথচ তেমন কোনো ক্যালোরি বা চর্বি আপনার শরীরে যোগ হচ্ছে না। এই কারণেই যারা ওজন কমাতে চান বা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে চান, তাদের জন্য ইসবগুলের ভুসি একটি চমৎকার প্রাকৃতিক উপায় হতে পারে। এটা একদিকে যেমন হজম ভালো রাখে, তেমনি অন্যদিকে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকেও বাঁচায়।

শারীরিক ফিটনেস কাকে বলে? কেনো এটি প্রয়োজন এবং কিছু ভ্রান্ত ধারণা নিতে এই পোস্ট থেকে জেনে নিন।

ইসবগুলের ভুসি খেলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা

ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা

সাধারণভাবে বলতে গেলে, ইসবগুলের ভুসি খেলে ওজন বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সত্যি কথা হলো, যদি নিয়মিতভাবে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যায়, তবে তা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে। এর কারণ হলো, এটি আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি ঢোকাতেই বাধা দেয়। যেহেতু ইসবগুলের ভুসি পেট ভরা রাখে, তাই আমরা অন্যান্য খাবার কম খাই, যা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

ইসবগুলের ভুসির ক্যালোরি এবং ফ্যাটের পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য। প্রতি চামচ ইসবগুলের ভুসিতে হয়তো কয়েক ক্যালোরি থাকতে পারে, যা আমাদের দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণের তুলনায় খুবই সামান্য। তাই সরাসরি ইসবগুল খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বরং, এর জলগ্রাহী ক্ষমতা পেটে একটি ভরের সৃষ্টি করে, যা আমাদের তাড়াতাড়ি পেট ভরা অনুভব করায় এবং দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা লাগা থেকে বিরত রাখে। এর ফলে দিনের অন্যান্য সময়ে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়।

কিছু মানুষের মধ্যে এই ভুল ধারণা থাকতে পারে যে ইসবগুল খেলে যেহেতু অন্ত্র পরিষ্কার হয়, তাই হজমক্ষমতা বেড়ে যায় এবং এর ফলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। যদিও এটা সত্যি যে ইসবগুল হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, তবে এর মানে এই নয় যে এটি অস্বাভাবিক ক্ষুধা বাড়িয়ে দেবে। বরং, উন্নত হজম মানে হলো শরীর খাবারের পুষ্টি উপাদানগুলো আরও ভালোভাবে শোষণ করতে পারবে এবং বর্জ্য পদার্থ সহজে বের করে দিতে পারবে। এটি শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা পরোক্ষভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে।

ইসবগুল নিজে কোনো মিষ্টি বা চিনি ধারণ করে না। যদি কেউ মিষ্টি স্বাদের জন্য চিনি বা মধু মিশিয়ে ইসবগুল খায়, তবে সেই অতিরিক্ত চিনি বা মধুর কারণেই ওজন বাড়তে পারে, ইসবগুলের জন্য নয়। তাই যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের উচিত চিনি বা মিষ্টিবিহীনভাবে ইসবগুল গ্রহণ করা। এমনকি ফলের রসের সাথে মিশিয়ে খেলেও রসের অতিরিক্ত ক্যালোরি ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে।

ইসবগুলের ভুসি একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হিসেবে গণ্য হতে পারে, বিশেষ করে যারা কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজমের সমস্যায় ভুগছেন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। তবে মনে রাখতে হবে, এটি কোনো অলৌকিক সমাধান নয়। একটি সুষম आहार, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার মূল চাবিকাঠি। ইসবগুল এক্ষেত্রে একটি মূল্যবান সাহায্যকারী উপাদান হতে পারে।

ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম এই বিস্তারিত পোস্টের মাধ্যমে জানুন।

ইসবগুলের ভুসির ক্ষেত্রে ব্যক্তিভেদে এর প্রভাব

ব্যক্তিভেদে এর প্রভাব

বিভিন্ন মানুষের শরীরে ইসবগুলের ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়-

প্রথমত, আমাদের শরীরের গঠন, হজম ক্ষমতা এবং বিপাকীয় হার—এই সবকিছুই আলাদা। তাই একজনের শরীরে ইসবগুল যেভাবে কাজ করে, অন্যজনের শরীরে তেমন নাও করতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে ইসবগুল খাওয়ার পর খুব দ্রুত পেট ভরা অনুভব হতে পারে এবং দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা লাগে না। এর ফলে তাদের স্বাভাবিকভাবেই খাবারের পরিমাণ কমে যায়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো ইসবগুল পেট ফাঁপা বা গ্যাস তৈরি করতে পারে, যদিও এটি সাধারণত প্রথম কয়েকবার ব্যবহারের পরই ঠিক হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, খাদ্যাভ্যাস একটি বড় ভূমিকা পালন করে। যারা এমনিতেই প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান, তাদের শরীরে ইসবগুলের প্রভাব হয়তো ততটা noticeable নাও হতে পারে। কিন্তু যারা কম ফাইবারযুক্ত খাবার খান, তাদের জন্য ইসবগুল হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও, যারা খুব দ্রুত খাবার খান বা পর্যাপ্ত জল পান করেন না, তাদের ক্ষেত্রে ইসবগুল সঠিকভাবে কাজ করার জন্য যথেষ্ট সময় এবং জলের প্রয়োজন হতে পারে।

তৃতীয়ত, মানসিক এবং শারীরিক কার্যকলাপের স্তরও ইসবগুলের প্রভাবকে প্রভাবিত করতে পারে। যারা শারীরিকভাবে বেশি সক্রিয়, তাদের শরীরে ক্যালোরির চাহিদা বেশি থাকে। ইসবগুল পেট ভরা রাখার অনুভূতি দিলেও, তাদের শরীরে দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য কিছুক্ষণ পর ক্ষুধা লাগতে পারে। অন্যদিকে, যারা sedentary জীবনযাপন করেন, তাদের ক্ষেত্রে ইসবগুল হয়তো ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

সবশেষে, এটা মনে রাখা দরকার যে ইসবগুল কোনো ওষুধ নয়, এটি একটি প্রাকৃতিক ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। এর উপকারিতা পেতে হলে নিয়মিত এবং সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করা জরুরি। ব্যক্তিভেদে এর প্রভাব ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণভাবে এটি হজমের জন্য উপকারী এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। যদি কারো বিশেষ কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে, তবে ইসবগুল শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সবসময় বুদ্ধিমানের কাজ।

কোন কোন খাবার খেলে তাড়াতাড়ি মোটা হওয়া যায় এই পোস্ট থেকে পড়ে নিন। 

উপসংহার

ইসবগুলের ভুসির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর উচ্চমাত্রার দ্রবণীয় ফাইবার। এই ফাইবার হজমতন্ত্রে প্রবেশ করার পর পানির সাথে মিশে একটি স্থিতিশীল জেল তৈরি করে। এই জেল একদিকে যেমন মলের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে, তেমনি অন্ত্রের মধ্য দিয়ে মলের চলাচলকে মসৃণ করে তোলে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও, এই জেল খাদ্যনালীতে ধীরে ধীরে শর্করা নিঃসরণে সাহায্য করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে স্থিতিশীল রাখতে ভূমিকা রাখে। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা।

অন্যদিকে, ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভূমিকা বহুমুখী। প্রথমত, এটি পেট ভরা থাকার অনুভূতি দেয়, যা অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের আকাঙ্ক্ষাকে কমিয়ে আনে। দ্বিতীয়ত, ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ক্যালোরি শোষণকে কিছুটা হলেও কমাতে পারে। তবে এটা মনে রাখতে হবে, ইসবগুল কোনো ম্যাজিক উপাদান নয় যে একাই ওজন কমিয়ে দেবে। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, যার মধ্যে রয়েছে সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন কমানোর জন্য অপরিহার্য। ইসবগুল এক্ষেত্রে একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

যারা ওজন বাড়াতে চান, তাদের জন্য ইসবগুল সরাসরি কোনো কাজে আসে না। ওজন বাড়ানোর মূল ভিত্তি হলো দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো, যা শরীর খরচ করে তার চেয়ে বেশি হতে হবে। এক্ষেত্রে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার, যেমন শস্য, আলু, মিষ্টি ফল, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যেমন বাদাম ও বীজ গ্রহণ করা জরুরি। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ডিম, মাংস, মাছ, এবং ডাল পেশি গঠনে সাহায্য করে, যা ওজন বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসবগুল যেহেতু পেট ভরা রাখে, তাই এটি ওজন বাড়াতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য সরাসরি কোনো সুবিধা দেয় না।

পরিশেষে বলা যায়, ইসবগুলের ভুসি একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক উপাদান যা হজম এবং ওজন ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করতে পারে। তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করে সঠিক ব্যবহার এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার ওপর। ওজন কমানো বা বাড়ানো, উভয় ক্ষেত্রেই একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের বিকল্প নেই। ইসবগুল সেই পরিকল্পনার একটি অংশ হতে পারে, তবে কখনোই একমাত্র সমাধান নয়।

 

পরামর্শ পেতে – 01711794071 , 01753631846 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ফিট বে

Leave a Reply