গ্রিন টি তৈরি হয় ক্যামেলিয়া সিনেনসিস নামের এক ধরনের গাছের পাতা থেকে। এটা খুব পরিচিত একটা পানীয়। অন্য চায়ের মতো এটাকে বেশি পোড়ানো (জারিত) হয় না, তাই এর ভেতরের ভালো জিনিসগুলো নষ্ট হয় না। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গ্রিন টি বিশেষভাবে সহায়ক হতে পারে। এর কারণ হলো, গ্রিন টি-তে কিছু বিশেষ উপাদান বিদ্যমান যা শরীরের ফ্যাট বার্ন করতে এবং হজমক্ষমতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে তা শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে। আজ আমরা ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করবো।
গ্রিন টি-তে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাওয়া যায় যা একে ওজন কমানোর জন্য কার্যকরী করে তোলে। এর মধ্যে অন্যতম হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ক্যাটেচিন। ক্যাটেচিন, বিশেষ করে এপিক্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট (EGCG), একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাক প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। দ্রুত বিপাক প্রক্রিয়ার ফলে শরীর বেশি ক্যালোরি খরচ করতে পারে, যা ওজন কমাতে সহায়ক। এছাড়াও, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালস (free radicals) দূর করতে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গ্রিন টি সরাসরি কোনো ম্যাজিকের মতো কাজ না করলেও, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। গ্রিন টি পান করার ফলে শরীরে ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং ক্যালোরি খরচ করার ক্ষমতা বাড়ে। এটি ক্ষুধা কমাতে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতেও সাহায্য করে, ফলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে। তবে মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র গ্রিন টি পান করলেই ওজন কমবে না, এর সাথে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, যেমন – সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম বজায় রাখা জরুরি।
কোন কোন খাবার খেলে তাড়াতাড়ি মোটা হওয়া যায় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক নিয়ম
ওজন কমাতে গ্রিন টির উপকারিতা পেতে হলে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম হিসেবে ভারী খাবার খাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে বা পরে পান করা উচিত। গ্রিন টি ক্যাফিন ও ক্যাটেচিন সমৃদ্ধ, যা বিপাকহার বাড়াতে সহায়ক। তাই, ওজন ঝরাতে চাইলে খাবারের মাঝে গ্রিন টি পান করাই সবচেয়ে ভালো। খালি পেটে গ্রিন টি খেলে তেমন উপকার পাওয়া যায় না।
কখন খাবেন?
ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি খাওয়ার একটা সঠিক সময় আছে। সকালের নাস্তা খাওয়ার পরে এক কাপ গ্রিন টি খেলে খাবার হজম হতে সুবিধা হয় আর শরীরও চাঙ্গা থাকে। দুপুরে ভাত খাওয়ার পরেও এক কাপ গ্রিন টি খাওয়া ভালো, এটা খাবার पचाতে সাহায্য করে আর শরীরের চর্বি কমাতেও কাজে লাগে। যারা ব্যায়াম করেন, তারা ব্যায়াম করার আধ ঘণ্টা আগে গ্রিন টি খেলে শরীরে জোর পান, ফলে ব্যায়ামটা ভালোভাবে করা যায় আর বেশি ক্যালোরিও খরচ হয়। তবে, খাবার খাওয়ার অন্তত আধ ঘণ্টা আগে বা পরে গ্রিন টি খাওয়া উচিত। কারণ খাবারের সাথে সাথে খেলে শরীরের কিছু দরকারি জিনিস (খনিজ) ঠিকমতো ঢুকতে পারে না।
রাতে ঘুমানোর আগে গ্রিন টি না খাওয়াই ভালো। এর কারণ হলো গ্রিন টি-তে একটু ক্যাফেইন থাকে, যা ঘুমের সমস্যা করতে পারে। তাই দিনের বেলায় সঠিক সময়ে আর অল্প পরিমাণে গ্রিন টি খেলে ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীরটাও সুস্থ থাকে। তবে শুধু গ্রিন টি খেলেই ওজন কমবে না, এর সাথে সাথে ভালো খাওয়া দাওয়া আর নিয়মিত ব্যায়ামও করতে হবে।
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম হিসেবে গ্রিন টি কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখবেন?
গ্রিন টি বানানোর সময় কতক্ষণ গরম পানিতে পাতা বা টি ব্যাগ রাখবেন, তার ওপর এর স্বাদ নির্ভর করে। যদি আপনি হালকা স্বাদের গ্রিন টি পছন্দ করেন, তাহলে গরম পানিতে ২ থেকে ৩ মিনিট ভিজিয়ে রাখাই যথেষ্ট। এতে গ্রিন টির হালকা মিষ্টি আর তরতাজা ভাব বজায় থাকবে।
অন্যদিকে, যদি আপনি একটু কড়া স্বাদের গ্রিন টি পান করতে চান, তাহলে ৩ থেকে ৫ মিনিট পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এর চেয়ে বেশি সময় ধরে গ্রিন টি গরম পানিতে রাখলে তা তেতো হয়ে যেতে পারে। বেশি তেতো হলে গ্রিন টি পান করতে অসুবিধা হতে পারে এবং এর উপকারিতা থেকেও আপনি বঞ্চিত হতে পারেন। তাই নিজের পছন্দ অনুযায়ী সঠিক সময় ধরে গ্রিন টি ভেজানোই বুদ্ধিমানের কাজ।
কতবার খাবেন?
ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি পান করার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে। সাধারণত, দিনে ২ থেকে ৩ কাপ গ্রিন টি পান করাই যথেষ্ট। এই পরিমাণে গ্রিন টি পান করলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের জন্য উপকারীও হয়।
তবে মনে রাখতে হবে, বেশি পরিমাণে গ্রিন টি পান করলে কিছু সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে বুক ধড়ফড় করা, পেটে অস্বস্তি বা ঘুমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ওজন কমানোর আশায় অতিরিক্ত গ্রিন টি পান না করাই ভালো। পরিমিত পরিমাণে পান করাই শরীরের জন্য সবচেয়ে ভালো।
কীভাবে তৈরি করবেন?
ভালো মানের গ্রিন টি বানানোর জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার। প্রথমে, চেষ্টা করুন ভালো মানের গ্রিন টি পাতা অথবা টি ব্যাগ ব্যবহার করতে। এতে গ্রিন টির আসল স্বাদ ও উপকারিতা পাওয়া যায়।
এরপর, গ্রিন টি তৈরির জন্য সঠিক তাপমাত্রার জল ব্যবহার করা খুব জরুরি। জল খুব বেশি গরম অর্থাৎ ফুটন্ত হওয়া উচিত না। প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার জল গ্রিন টি তৈরির জন্য সবচেয়ে ভালো। কারণ বেশি গরম জল ব্যবহার করলে গ্রিন টি-তে থাকা দরকারি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
সবশেষে, গ্রিন টি-তে চিনি বা অন্য কোনো মিষ্টি মেশানো উচিত না। ওজন কমাতে চাইলে এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। তবে যদি স্বাদের জন্য কিছু মেশাতে চান, তাহলে সামান্য মধু বা একটু লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, তা যেন খুব বেশি পরিমাণে না হয়।
ওজন কমাতে গ্রিন টির কার্যকারিতা বাড়ানোর কিছু টিপস
শুধু গ্রিন টি খেলেই কিন্তু ওজন কমে যাবে না। এর কার্যকারিতা বাড়াতে হলে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। তার মধ্যে সবচেয়ে জরুরি হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। আপনি যদি প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করেন এবং শাকসবজি, ফলমূল ও কম ফ্যাটযুক্ত খাবার খান, তাহলে গ্রিন টি আপনার ওজন কমানোর চেষ্টায় আরও বেশি সাহায্য করবে। গ্রিন টি শরীরের ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে আর ব্যায়াম সেই প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত করে তোলে।
ওজন কমাতে চাইলে আপনাকে কিছু খাবার ও পানীয় বাদ দিতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন – ফাস্ট ফুড বা প্যাকেটজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট ও চিনি থাকে, যা ওজন কমানোর পথে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়াও, অতিরিক্ত চিনি মেশানো পানীয়, যেমন – কোল্ড ড্রিংকস বা মিষ্টি জুস খাওয়াও বন্ধ করতে হবে। এর বদলে প্রচুর পরিমাণে জল পান করা শরীরের জন্য খুবই জরুরি। জল শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচায় এবং হজমক্ষমতাকেও ভালো রাখে, যা ওজন কমানোর জন্য সহায়ক।
সবশেষে, মনে রাখবেন ওজন কমানো একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। তাড়াহুড়ো করলে ভালো ফল পাওয়া যায় না। তাই ধৈর্য ধরতে হবে এবং নিয়মিত গ্রিন টি পান করতে হবে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে। ধীরে ধীরে হলেও আপনি অবশ্যই আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।
কিভাবে রোগা থেকে অল্প সময়ের মধ্যে মোটা হবেন জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
সতর্কতা
গ্রিন টি সাধারণত শরীরের জন্য ভালো হলেও, কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা এবং যারা বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, তাদের গ্রিন টি খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ গ্রিন টি-তে ক্যাফেইন থাকে, যা এই সময়কালে মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এছাড়াও, মনে রাখবেন অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রিন টি পান করলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশি ক্যাফেইন শরীরে প্রবেশ করলে পেটে অস্বস্তি, বুক ধড়ফড় করা অথবা ঘুমের সমস্যা হতে পারে। তাই দিনে ২-৩ কাপের বেশি গ্রিন টি পান করা উচিত নয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যদি আপনি কোনো বিশেষ রোগের জন্য ওষুধ সেবন করেন, তাহলে গ্রিন টি খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। কারণ গ্রিন টি কিছু ওষুধের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে এবং ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে অথবা শরীরে অন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই নিজের সুরক্ষার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
উপসংহার
সহজ কথায় বলতে গেলে, ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি একটা ভালো সাহায্যকারী হতে পারে। তবে এটা কোনো ম্যাজিকের মতো না যে শুধু খেলেই ওজন কমে যাবে। গ্রিন টি-তে কিছু দরকারি জিনিস আছে যা ফ্যাট কমাতে আর খাবার হজম করতে সাহায্য করে। তাই যারা রোগা হতে চান, তারা প্রতিদিনের জীবনে গ্রিন টি যোগ করতে পারেন।
কিন্তু মনে রাখবেন, গ্রিন টি কখন খাবেন, কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখবেন আর কতবার খাবেন – তার কিছু নিয়ম আছে। নিয়ম মেনে খেলে তবেই ভালো ফল পাবেন। আর শুধু গ্রিন টি খেলেই হবে না, এর সাথে আপনাকে ভালো খাবার খেতে হবে আর রোজ ব্যায়ামও করতে হবে। তাহলে গ্রিন টি আপনার ওজন কমানোর চেষ্টায় আরও বেশি কাজে দেবে।
অনেকে মনে করেন, অনেক বেশি গ্রিন টি খেলে তাড়াতাড়ি রোগা হওয়া যাবে। কিন্তু এটা ঠিক না। বেশি খেলে পেটে সমস্যা বা ঘুমের অসুবিধা হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে আর নিয়ম মেনে গ্রিন টি খান, আর একটা স্বাস্থ্যকর জীবন চালান। তাহলেই দেখবেন ওজন কমছে।
পরামর্শ পেতে – 01711794071 , 01753631846 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ফিট বে